নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউনিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে জমি দখলে সহায়তা থেকে শুরু করে গভীর রাতে মৎস্যজীবীদের বিবস্ত্র করে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ওসির দাপটে পুরো থানা এলাকার মানুষ তটস্থ থাকেন। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি আজিমুল করিম।
জানা যায়, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পদ থেকে বরখাস্ত হওয়া হাদিস মীরের সঙ্গে যোগসাজশে জমি দখলের সহায়তাও করেছেন ওসি আজিমুল করিম। এ ধরনের পৃথক তিনিটি অভিযোগ মহাপুলিশ পরিদর্শক, পুলিশ কমিশনার ও অ্যাডিশনাল ডিআইজি বরাবর জমা দিয়েছেন জামাল শরীফ নামের এক ব্যক্তি। ৩০ জুলাই দেয়া ওই অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, কাউনিয়া থানার সাপানিয়া এলাকার বাসিন্দা জামাল শরীফের ক্রয়কৃত জমি দখল করেন ওই এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত এবং অনৈতিক কর্মকা-ের কারণে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পদ থেকে বরখাস্ত হওয়া হাদিস মীর। দখলে সহায়তা করেন খোদ ওসি আজিমুল করিম। জমি দখলের কারণে বরিশাল যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে মামলা করা হলে ওই জমিতে স্থিতাবস্থা জারি করেন আদালত। কিন্তু আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে ওসি আজিমুল করিম থানার এএসআই আ. রহিমকে পাঠিয়ে ৪ মে তার জমিতে লাগানো প্রায় ১০ হাজার টাকার গাছ কেটে প্রতিপক্ষ হাদিস মীরের লোকজনকে দিয়ে দেন। জামাল বাধা দিলে এএসআই আ. রহিম তাকে মামলাসহ অ্যারেস্ট করার হুমকি দেন। জামাল শরীফ থানায় আইনের আশ্রয় চাইলে ওসি তাকে থানা থেকে বের করে দেন। পরে ওই জমিতে বাড়ি নির্মাণে সহযোগিতা করেন ওসি। বাধা দিলে জামাল ও তার স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। শুধু তাই নয়, জামাল তার স্ত্রী এবং মেয়েকে থানায় নিয়ে গালাগাল করা হয় এবং হাজতে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। কিছু সময় পর হাদিস বাহিনীর লোকজনকে ডেকে তাদের কাছ থেকে লিখিত নিয়ে জামাল শরীফ ও তার পরিবারের লোকজনকে আদালতে পাঠানো হয়। ওইদিন তারা জামিনে এসে শেবাচিম হাসপাতালের ছাড়পত্র ও লিখিত অভিযোগসহ কাউনিয়া থানায় হাদিস মীরদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে প্রথমে জামাল শরীফের কাছে ওসির খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ১০ হাজার, ৫ হাজার, ২ হাজারসহ ১৭ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দেয়ায় ওসি আজিমুল করিম গালাগাল করাসহ বখসিকে অভিযোগ ফেলে রাখতে বলেন।
জামাল শরীফের দেয়া অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ওসি আজিমুল করিমের সরাসরি সহযোগিতায় বিবাদী হাদিস মীর এলাকায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অনেক অসহায় মানুষের জমি-জমা, অর্থ কেড়ে নিয়ে পথে বসিয়েছে।
কাউনিয়া থানার চরআবদানী এলাকার শামীম জানান, ‘আমার এলাকার হালিম গাজীর কাছে ৭১ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। সেই টাকা চাওয়ায় হালিম গাজীর মেয়ে আমাদের পরিবারকে জড়িয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়ায়। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা করতে গেলে আমাদের সাড়ে ৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন ওসি। পুলিশ কমিশনার, এসির কাছে গিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। উল্টো হালিম গাজীর একটি অভিযোগ নেয়া হয়েছে থানায়। মধ্যরাতে দুই মৎস্যজীবীকে বিবস্ত্র করে মারধরের অভিযোগ রয়েছে ওসি আজিমুল করিমের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় উপ-পুলিশ কমিশনারের (উত্তর) কাছে অভিযোগও দেয়া হয়েছে।
কাউনিয়া থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বেচ্ছাচারিতার একটা মাত্রা থাকা দরকার। কিন্তু আজিমুল করিম স্যার কোনো কিছু তোয়াক্কা করেন না। আইনকানুন তো মানতে হবে। মানুষকে সহায়তা করাই তো আমাদের মূল কাজ। সেখানে উল্টোটা করতে হচ্ছে।’ এসব অভিযোগের বিষয়ে ওসি আজিমুল করিম বলেন, থানায় মামলা করতে এসে ফেরত গেছে এমন অভিযোগের সত্যতা নেই। আমরা জনসাধারণের সেবার জন্য যথেষ্ট কাজ করছি। যে ঘটনা মামলা হিসেবে গ্রহণ করার মতো সেটি আমরা গ্রহণ করছি। এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সেটা আমরা তদন্ত করি। তদন্তের পর যে রিপোর্ট আসবে সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। অপরাধ করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
Leave a Reply